মেহেদী মাসুদঃ মনে হচ্ছিল প্রথম টেস্টটি হয়তো ড্র করতে চাবে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিস ক্রিকেট টিম কারণ বাংলাদেশ দলের স্কোর এবং চতুর্থ ইনিংসে প্রায় চার শত রানের চ্যালেঞ্জ হয়ত মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। কিন্তু তরুণ ব্যাটসম্যান কাইল মায়ার্স অভিষেকে খেলতে নেমে যেন নিজেকে জয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। প্রথম টেস্টের শেষ দিনে এসে দারুন এক দৃষ্টি সন্দিত ক্রিকেট খেলা উপহার দিয়ে দলের জয়ের সঙ্গে তুলে নিলেন অনেক রেকর্ড। অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরি।
ব্যাট হাতে ডাবল-সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অবিস্মরনীয় জয়ের স্বাদ পাইয়ে দিলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান । তার অপরাজিত ২১০ রানের সুবাদে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ক্যারিবীয়রা।
সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। জবাবে দিন শেষে ৩ উইকেটে ১১০ রান করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্টটি জিততে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ছিলো ৭ উইকেট।
আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন পড়ে আরও ২৮৫ রান। এ অবস্থায় দুই অভিষিক্ত খেলোয়াড় এনক্রুমার বোনার ১৫ ও কাইল মায়ার্স ৩৭ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন।
আজ ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনের শুরু থেকে বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকেন বোনার ও মায়ার্স। উইকেট বাঁচিয়ে খেলাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো। উইকেটে সেট হয়ে যাবার পর রানের দিকে মনোযোগি হয়েছেন তারা। তাই প্রথম সেশনে ৮৭ রান তুলে ফেলেন বোনার ও মায়ার্স। দু’জনে অবিচ্ছিন্ন থেকে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান।
৯১ রান নামের পাশে রেখে সেঞ্চুরির স্বপ্ন নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিলেন মায়ার্স। বিরতির পর পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের করা ৮৪তম ওভারের প্রথম বলে স্লিপ ও গালির মাঝখান দিয়ে চার মেরে অভিষেকেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। টেস্ট ইতিহাসে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকের ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন মায়ার্স।
এায়ার্সের সেঞ্চুরি ও বোনারের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় সেশনেও কোন উইকেট পায়নি বাংলাদেশ। ফলে ৩ উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন জয় থেকে ১২৯ রান দূরে ছিলো ক্যারিবীয়রা।
বিরতির পর প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে স্পিনার তাইজুল ইসলামকে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন বোনার। কিন্তু পরের ডেলিভারিতে বোনারকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশকে সেরা ব্রেক-থ্রু এনে দেন তাইজুল। ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৪৫ বলে ৮৬ রান করে থামেন বোনার। চতুর্থ উইকেটে ২১৬ রান যোগ করেন বোনার ও মায়ার্স। এক ম্যাচে অভিষেক খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে জায়গা করে নেন বোনার ও মায়ার্স। এই তালিকার শীর্ষে আছেন পাকিস্তানের খালিদ আবদুল্লাহ ও আব্দুল কাদির। ১৯৬৪ সালে করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হওয়া খালিদ-কাদির উদ্বোধনী জুটিতে ২৪৯ রান করেছিলেন।
বোনারের আউটের পর উইকেটে এসে সুবিধা করতে পারেননি জার্মেই ব্ল্যাকউড। ১১ বলে ৯ রান করে স্পিনার নাইম হাসানের বলে বোল্ড হন তিনি। দলীয় ২৯২ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ঊø্যাকউডের আউটের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন মায়ার্সই। জয়ের জন্য শেষ ২৩ ওভারে ৮৮ রানের দরকার পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মায়ার্সের মারুমুখী ব্যাটিংএ, অন্যপ্রান্তে শান্ত ছিলেন উইকেটরক্ষক জসুয়া ডা সিলভা। ২৬১তম বলে দেড়শ রান পূর্ণ করেন মায়ার্স।
প্রায় প্রতি ওভারেই বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি আদায় করে নেন মায়ার্স। ইনিংসের ১২৪তম ওভারের শেষ বল ও নিজের ৩০৩তম বলে ১ রান নিয়ে ডাবল-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি।
পরের ওভারে সিলভাকে থামান তাইজুল। ২০ রান করেন সিলভা। ষষ্ঠ উইকেটে সিলভাকে নিয়ে ১৩১ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন মায়ার্স। সিলভা যখন ফিরেন তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৩ রান। এরপর মিরাজের বলে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন কেমার রোচও। তবে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে কোন সমস্যাই হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
৩১০ বলে ২০টি চার ও ৭টি ছক্কায় অপরাজিত ২১০ রান করেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া মায়ার্স। অন্যপ্রান্তে ১ বল খেলে কোন রান না করে অপরাজিত থাকেন নয় নম্বরে নামা রাকিম কর্নওয়াল।
বাংলাদেশের মিরাজ ১১৩ রানে ৪টি, তাইজুল ৯১ রানে ২টি ও নাইম ১০৫ রানে ১টি উইকেট নেন।
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে মিরপুরে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪৩০/১০, ১৫০.২ ওভার (মিরাজ ১০৩, সাকিব ৬৮, সাদমান ৫৯, ওয়ারিকান ৪/১৩৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস : ২৫৯/১০, ৯৬.১ ওভার (ব্র্যাথওয়েট ৭৬, ব্ল্যাকউড ৬৮: মিরাজ ৪/৫৮)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ২২৩/৮ ডি., ৬৭.৫ ওভার (মোমিনুল ১১৫, লিটন ৬৯, ওয়ারিকান ৩/৫৭) :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ১১০/৩, ৪০ ওভার, মায়ারস ৩৭*, বোনার ১৫*, মিরাজ ৩/৫২) :
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ক (অতি-ইয়াসির) ব মিরাজ ২০
জন ক্যাম্পবেল এলবিডব্লু ব মিরাজ ২৩
শায়নে মোসলে এলবিডব্লু ব মিরাজ ১২
এনক্রুমার বোনার এলবিডব্লু ব তাইজুল ৮৬
কাইল মায়ার্স অপরাজিত ২১০
জার্মেই ব্ল্যাকউড বোল্ড ব নাইম ৯
জসুয়া ডা সিলভা বোল্ড ব তাইজুল ২০
কেমার রোচ ক সাইফ ব মিরাজ
রাকিম কর্নওয়াল অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-১১, লে বা-৪) ১৫
মোট (৭ উইকেটে, ১২৭.৩ ওভার) ৩৯৫
উইকেট পতন : ১/৩৯ (ক্যাম্পবেল), ২/৪৮ (ব্রার্থওয়েট), ৩/৫৯ (মোসলে), ৪/২৭৫ (বোনার), ৫/২৯২ (ব্লাকউড), ৬/৩৯২ (সিলভা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজ : ১৩-১-৭১-০,
তাইজুল : ৪৫-১৮-৯১-২,
মিরাজ : ৩৫-৩-১১৩-৪,
নাইম : ৩৪.৩-৪-১০৫-১।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তথ্য সূত্রঃ বাসস