মাহাবুবুর রহমান চঞ্চলঃ বাংলাদেশে তিন জনের করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া পর থেকে নড়ে চড়ে বসেছে সারা দেশের মানুষ। সেই সাথে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাঝে অতি মুনাফার লিপ্সা জাগ্রত হয়ে গিয়েছে যার প্রমান মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিক্রিত মূল্যে থেকে অনুধাবন করা যাচ্ছে। যা সত্যিই দুঃখ জনক। ভ্রাম্যমান আদালত বিষয়টি বেশ ভালভাবেই অনুধাবন করে ঐ সকল মৌসুমী সুবিধাভূগি ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে একটি অভিজাত ফার্মাসিকে অধিক মূল্যে মাস্ক বিক্রির কারণে অর্থদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। ঘটনাতি ঘটেছে সাভারে , ফার্মগেট এবং ময়মনসিংহে ।
অতিরিক্ত দামে মাস্ক বিক্রির অভিযোগে সাভারে লাজ ফার্মা লিমিটেডে অভিযান চালিয়ে দুই বিক্রয়কর্মীকে আটক করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে লাজ ফার্মাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দুপুরে ক্রেতা সেজে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মাস্ক কিনতে গেলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বাড়তি চাহিদার কথা বলে তার কাছে দুই টাকা মূল্যের সাধারণ মাস্ক ৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট বিক্রয় রশিদ চাইলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ফার্মেসির কর্মকর্তা। পরে ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান ও বিক্রয়কর্মী পাপন দেবনাথকে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে সময়ক্ষেপণের অভিযোগে লাজ ফার্মার ম্যানেজিং পার্টনার আলমগীর হোসেন মাখনকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সাভার থানা রোডের সবগুলো ফার্মেসিতে অভিযান চালানো হয়। করোনাভাইরাস আতঙ্কে সাভারের ফার্মেসিগুলোতে উচ্চমূল্যে মাস্ক বিক্রির সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।
তিনি বলেন, লাজ ফার্মা লিমিটেডে দুই টাকা মূল্যের মাস্ক বিক্রি করা হচ্ছিল ৪০ টাকা। তারা কোথা থেকে কত টাকায় এই মাস্ক সংগ্রহ করেছে তা দেখাতে পারেনি, এমনকি আমাকেও বিক্রয় রশিদ দেননি। পরে তাদের দুজনকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে দোকানে অননুমোদিত অসংখ্য প্রসাধনী সামগ্রী পাওয়ায় জব্দ করা হয়। এসব কারণে তাদের এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ময়মনসিংহ: এদিকে ময়মনসিংহ নগরীতে সার্জিক্যাল মাক্সের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত মুনাফা ও পণ্যের রশিদ সংরক্ষন না করায় নগরীর দূর্গাবাড়ি এলাকায় দুটি ফার্মিসিকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদুর রহমান।
সোমবার (৯ মার্চ) দুপুরে অতিরিক্ত মূল্যে মাক্স বিক্রি প্রতিরোধে ও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন।
অভিযানে নগরীর দূর্গাবাড়ি এলাকার বায়োল্যাব সার্জিক্যাল ফার্মিসিকে ভোক্ত অধিকার আইনে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। একই সময় এস কে মেডিসিন ফার্মিসিকে অতিমুনাফার দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আতংকিত হয়ে পড়েছে মানুষ। বাংলাদেশে সম্প্রতি তিনজন করোনা আক্রান্তের খবরে দেশের জনগণ অনেকটাই আতংকিত। প্রতিরোধে বেশিরভাগ মানুষ মাক্স ব্যবহারের দিকে ঝুকেছে। এই সুযোগে একশ্রেনীর অতিমুনাফাধারীরা মানুষের কাছ থেকে অন্যায্য মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৭০ থেকে ৭৫ টাকার একটি সার্জিক্যাল মাক্স ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা ভোক্তা অধিকার আইনে দন্ডনিয়।
ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদুর রহমান অভিযান পরিচালনার সময় ব্যবসায়ীদের সচেতনামূলক নির্দেশনা দেন। তিনি দোকানীদের প্রতি মাক্সে ২০ থেকে ২৫ শতাংশের বাইরে মুনাফা অর্জন করতে বারণ করেন। আইন ও নির্দেশনা অমান্য করে কেউ অতি মুনাফা, পণ্যের যথাযথ রশিদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ না করলে আইন অনুযায়ী দন্ডিত হবেন বলে নির্দেশনা প্রদান করেন। অভিযানে আরও ছিলেন, জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শামসুল আলম। জেলা প্রশাসনের এ অভিযানকে স্বাগত ও সাধুবাদ জানিয়েছে সাধারণ জনগণ। বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি সকলের।